ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রকিবুল হাসান খান রাসেলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। তার চাঁদাবাজি ও দখলবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী। এসব নিয়ে ইতিমধ্যে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।
ভুক্তভোগী কয়েকজন জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ভালুকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান দখল, অন্যের পুকুরের মাছ লুট, একাধিক মানুষের বাড়িঘর লুটপাট, ভাঙচুর, জমি দখল, অন্যের জমিতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ, হাটবাজারে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যুবদল নেতা রাসেল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও লুটপাটের রাজনীতি ছেড়ে জনগণের ভালোবাসা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে চাঁদাবাজি ও লুটপাটে মেতেছেন রাসেল। তার হয়রানি থেকে বাদ যাননি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। তার কথামতো কাজ না করলে আওয়ামী লীগের দোসর ট্যাগ দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এই নেতার বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসব বন্ধে তারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট মধ্যরাতে ভালুকা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এজাদুল হক পারুলের বাসায় লুটপাট চালিয়েছেন রাসেল ও তার অনুসারীরা। ওই বাসা থেকে ৩৫ ভরি স্বর্ণ, পাঁচটি মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যান তারা। ৬ আগস্ট উপজেলার ধীতপুর ইউনিয়নের ধলিয়া গ্রামের আজিজুল হকের মাছের খামার থেকে ২০ লাখ টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যান রাসেল। একই দিন ওই এলাকার আরেক ব্যক্তির খামার থেকে মুরগি লুট করে নিয়ে যান। তার ভয়ে থানায় অভিযোগও দেননি ভুক্তভোগীরা।
গত ১৯ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার ভরাডোবা ইউনিয়নের নাসির ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানায় গিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন রাসেল। চাঁদা না পেয়ে কারখানার ব্যবসায়িক কার্যাদেশপ্রাপ্ত (ওয়ার্ক অর্ডার) প্রতিষ্ঠানের মালিকদের হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায় কার্যাদেশপ্রাপ্ত স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভরাডোবা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মোশারফ হোসেন বাহার বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কোনও প্রতিকার পাননি এই ভুক্তভোগী।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এজাদুল হক পারুল বলেন, ‘আমি ক্লিন ইমেজের রাজনীতি করছি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভালুকাবাসী আমাকে বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। কখনও কারও ক্ষতি করিনি। তবু গত ৫ আগস্ট রাতে যুবদল নেতা রাসেল দলবল নিয়ে এসে আমার বাড়িতে যে লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়েছে, তা দুঃখজনক। রাসেলের নেতৃত্বে একদল যুবক আমার বাসায় ডুকে ৩৫ ভরি স্বর্ণ, পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, ঘড়িসহ ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যান। রাজনীতিতে ভালো সময় খারাপ সময় সবারই আসবে। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি তখন যখন দেখেছি রাসেল আমার স্ত্রীর গলা থেকে সোনার চেইন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এটা কোনও রাজনৈতিক চর্চা হতে পারে না।’
ভরাডোবা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মোশারফ হোসেন বাহার বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছি। নাসির ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বালু ভরাটের জন্য সম্প্রতি ব্যবসায়িক কার্যাদেশ পাই আমরা। কার্যাদেশ পাওয়ার পর কোম্পানির শর্ত মেনে বালু ভরাটের কাজ শুরু করি। শতাধিক গাড়ি বালু সরবরাহ করেছি। গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে যুবদল নেতা রাসেলের নেতৃত্বে কয়েকজন সন্ত্রাসী আমাদের কাছে এসে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অপারগতা জানালে তারা একটি ট্রাক এনে নাসির ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে প্রবেশের রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। সেইসঙ্গে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় যারা বালু ভরাটের কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের খুন করে লাশ গুম করে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও গত পাঁচ দিনেও কোনও প্রতিকার পাইনি।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রকিবুল হাসান খান রাসেলের মোবাইল নম্বরে মঙ্গলবার ও বুধবার একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
তবে ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল খান রাজু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রকিবুল হাসান খান রাসেলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও লুটপাটের বিষয়ে এখনও কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়গুলো তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল হুদা খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চাঁদা দাবির ঘটনায় রকিবুল হাসান খান রাসেলের বিরুদ্ধে নাসির ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে রকিবুল হাসান খান রাসেল তাকে হয়রানি করতে পারে এই মর্মে নাসির ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। দুটি ঘটনা তদন্ত করে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’