নাজিবুল বাশার, টাঙ্গাইল সংবাদদাতা: ২০২৩ সালে এ হাসপাতাল থেকে নরমাল ও সিজিরিয়ান ডেলিভেরির হয়েছে ১ হাজার ৪৩ টি,বহি;বিভাগে সেবা নিয়েছে ২ লক্ষ ৪শ’ ৫১ জন। জরুরি বিভাগে সেবা নিয়েছে ৪৫ হাজার ১শ’ ৫৬ জন। অন্তবিভাগে গড় বেড অকুপেন্সি রেট শতকরা ১৫০ ভাগ এবং এ হাসপাতাল থেকে সরকারি কোষাগারে জমাকৃত ইউজার ফি ৯২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯শ’ ৩৮ টাকা।
এছাড়াও বিভিন্ন সেবার মান হিসেবে সারা দেশে উপজেলায় মধুপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রখম স্থান অর্জন করেছে। ক্যাম্পাসের সৌন্দয্য বৃদ্ধি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হাসপাতালের সুনাম ও সেবার মান বেড়ে চলা এ হাসপাতালটি সেবার মান ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দেশের মধ্যে গিত বছরে যৌথভাবে প্রথম স্থান ও টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে প্রথম স্থানসহ দেশ সেরা টপটেন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ১০০ শয্যার জনবল পেলে সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান অবস্থান ধরে রাখতে শূন্য জনবল পূরণ ও ১০০ শয্যার জনবল নিয়োগের দাবী হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের। ১০০ শয্যার মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী মধুপুর উপজেলার লাল মাটির মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকল্পে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি‘র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে নির্মিত হয় ১০০ শয্যা মধুপুর উপজেলা হাসপাতাল। ২০২০ সালে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়। জনবল আর অর্থ বরাদ্দের অভাবে হাসপাতালটির সুবিধা পাচ্ছিল না উপজেলাবাসী। গত ১ জুলাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ সাইদুর রহমান যোগদান করে তরুণ চিকিৎসকদের নিয়ে আন্তরিকতার সাথে ৫০ শয্যার জনবল ও অর্থবরাদ্দ দিয়েই চালু করেন ১০০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম। আগের একটি ওয়ার্ড ভেঙে চালু করা হয় পুরুষ, মহিলা ও শিশু নামে তিনটি পৃথক পৃথক ওয়ার্ড। চালু করা হয়েছে ১০টি কেবিন, সংক্রামক ব্যাধি ওয়ার্ড, মুক্তিযোদ্ধা ওয়ার্ড, নবজাতক সেবার জন্য স্ক্যানো ওয়ার্ড। প্রসূতী ওয়ার্ডে নিয়মিত সিজারিয়ান ডেলিভারি এবং নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে সাধারণ ও ভিআইপি কেবিন। বহিঃবিভাগে তৈরি করা হয়েছে কর্পোরেট হাসপাতালের আদলে সুসজ্জিত শীততাপ নিয়ন্ত্রীত এনসিডি কর্নার। যেখানে রয়েছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস ব্যবস্থা। চিকিৎসার পাশাপাশি বøাড সুগার, বøাড প্রেসার পরিমাপ, ইসিজি পরীক্ষা ও ঔষধ বিতরণ। বহিঃবিভাগে রয়েছে আইএমসিআই-পুষ্টিকর্নার, ব্রেস্টফিডিং কর্নার, এএনসি-পিএনসি কর্নার, ভায়া সেন্টার, কিশোর-কিশোরী সেবাকেন্দ্র, ডেন্টাল ইউনিট, ফিজিওথেরাপি সেন্টার, টেলিমেডিসিন সেন্টার, স্ব্যাস্থ্য শিক্ষা কর্নার সহ নানা সেবা।
হাসপাতালের ডায়াগনেস্টিক সেবায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে অত্যাধুনিক সেলকাউন্টার মেশিন ও সর্বাধুনিক ডিজিটাল এক্সরে মেশিন স্থাপন। ডোপ টেস্ট সহ সকল অত্যাবশ্যকীয় পরীক্ষা, আল্ট্রাসোনগ্রাম ও ইসিজি পরীক্ষা নিয়মিত হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা রাজিয়া বেগম জানান, তিনি গাইনি বিষয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছে। তাকে রক্ত, প্রসাব ও আল্ট্রাসোনোগ্রাম পরীক্ষা দিয়েছিলো। তিনি হাসপাতালেই স্বল্প খরচেই করেছেন। রহিমা বেগম জানান, তিনি টিকেট কেটে ডাক্তার দেখালেন। তিনিও তিনটি পরীক্ষা করিয়েছেন। টিকেট কাউন্টারের পাশে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের লম্বা লাইন। সারিবদ্ধভাবে টিকেট কেটে স্ব-স্ব বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর চাপ অনেকটাই বেশী। দ্রæত ১০০ শয্যার জনবল নিয়োগের দাবি স্থানীয়দের। হাসপাতালের ইউএইচএফও জানালেন জুনিয়র কন্সালন্টেন কার্ডিওলজি, নাক কান গলা, চক্ষু, মেডিসিন অর্থপেডিক্স, শিশু, সার্জারিসহ বিভিন্ন পদে ১৫৫ পদের মধ্যে ৩৬টি পদের জনবল খালি রয়েছে। তিনি জনবল নিয়োগের দাবি জানান। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডাঃ মিনহাজ উদ্দিন মিয়া জানান, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দেশ সেরা হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। সেবা ও অবকাঠামো সবমিলিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি জেলার মধ্যে অন্যন্য। জনবল নিয়োগের বিষয়ে তিনি জানান, জনবলের চাহিদা পাঠিয়েছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন, মধুপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে আরো আধুনিক করা হবে। সেবার মান বিবেচনায় দেশসেরা হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। ভবিষতে সেবার মান আরো বাড়ানো ও এ অর্জন বজায় রাখার জন্য চিকিৎসকদের নিরলস ভাবে কাজ করতে হবে।