মোঃ নজরুল ইসলাম, পাঁচবিবি(জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: অগ্রানেরি সাত সকালে ভাঙ্গে সবার ঘুম, কাচ্তে হাতে কৃষাণ ছুটে ফসল কাটার ধুম, আহারে খুশি খুশি মন, নবান্নেতে রইলো বন্ধু তোমার নিমন্ত্রণ। কবির এই কবিতায় মনে পড়ে গেল আজ নবান্ন। পন্জিকা মতে ১ অগ্রহায়ণ। গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারে ঢেঁকিতে চাল ভেঙ্গে আটা করে চলতো নবান্নের উৎসব।
আগের দিনে গ্রামের মানুষ ঢেঁকিতে ধান ভানতো এবং চাল থেকে আটা করে পুলি পিঠা ভাপা পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। আর আত্মীয় স্বজন এলে তো আর কথায় নেই। গ্রামে গেলে শোনা যেত সেই ঢেঁকিতে ধান চাল ভাঙ্গার শব্দ। আজ সেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারে ঢেঁকি দেখা যায়। এক সময় জয়পুরহাট জেলার গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার প্রচলন ছিল। সে সময় পরিবারের গৃহিনীরা ধান চাল ভাঙ্গার কাজ ঢেঁকিতেই করতো। মুসলমানদের ঈদ পরব আর হিন্দুদের পূজা পার্বণ নবান্ন উৎসব পৌষের পুলি পিঠা ভাপা ও নারিকেল পিঠা সহ হরেক রকমের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে নারীদের ঢেঁকিতে ধান চাল ভাঙ্গার কলরবে চারিদিকে যেন হৈচৈ পড়ে যেত। আগের দিনে দরিদ্র পরিবারের মানুষ ধান চাল ও আটা ভাঙ্গার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো আবার কেউ কেউ ঢেঁকি ছাঁটা চাল বাজারে বিক্রয় করতো। এই ঢেঁকি ছাঁটা চাল মানুষ যেমন পছন্দ করতো তেমন ছিল কদর। বর্তমানে ধান ভাঙ্গার নতুন যান্ত্রিক মেশিন আবির্ভাবের ফলে সেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে। গ্রামাঞ্চলের গুটি কয়েক পরিবারে ঢেঁকি দেখা গেলেও অদুর ভবিষ্যতে ঢেঁকির প্রচলন হয়তো থাকবেনা বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল। গ্রামের কিছু প্রবীণ লোকের সাথে আলাপ চারিতায় জানাযায়, এই অঞ্চলে এক সময় ঢেঁকিতে ধান চাল ভাঙ্গার ব্যাপক প্রচলন ছিল।
বিভিন্ন উৎসবের সময় প্রতিটি বাড়িতে নতুন বউ জামাই মেয়ে আত্মীয় স্বজনদের উপস্থিতিতে বাড়িতে পূর্ণ হতো আনন্দ মূখর পরিবেশে। শেষ রাতে বাড়ির নারীদের ঢেঁকিতে ধান চাল ভাঙ্গার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যেত। আজ আর সেই শব্দ শোনা যায় না। সেই ঢেঁকি ছাঁটা চালের যে সুস্বাদু পাওয়া যেত বর্তমানে যান্ত্রিক মেশিনে ভাঙ্গা চালের সে স্বাদ পাওয়া যায় না।