মোঃ নজরুল ইসলাম, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাট জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করতেন গাছি’রা। এই গাছি’রা দক্ষিণাঞ্চল থেকে জয়পুরহাটের পাঁচবিবির গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় প্রতি বছর ৬/৭ জন করে গাছি’রা গিয়ে তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় অস্থায়ী ভাবে ঘর এবং রস থেকে গুড় তৈরী করার চুলা নির্মাণ করে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন।
প্রথমে গাছি’রা খেজুর গাছ ভালো করে চেঁছে বিকেলের দিকে প্রতিটি গাছে কলস বেঁধে রাখে সকালের দিকে গাছ গুলো থেকে রস সংগ্রহ করে নিয়ে যায় গুড় তৈরীর জন্য। আবার কিছু গাছি’রা বাহুকে করে রস নিয়ে সকালের দিকে শহর ও গ্রামে গিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রয় করতো আর বলতো এই রস নিবে গো খেজুরের রস। শীতের মৌসুম এলেই গাছি’দের পদচারণায় গ্রামগঞ্জে মুখরিত হয়ে উঠতো সেই সাথে তাদের রস থেকে তৈরী করা গুড়ের সুবাসে চারিদিকে যেন সুভাসিত হয়ে যেত। গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আগের মতো খেজুর গাছ আর তেমন দেখা মেলে না। এক সময় হয়তো হারিয়ে যাবে খেজুর গাছ। একজন সফল গুড় ব্যাবসায়ী তাসাউর রহমান এর সাথে আলাপ চারিতায় জানা যায়: খুচরা বাজারে প্রতি ১কেজি গুড় বিক্রয় হচ্ছে ১৫০/ ১৬০ টাকা দরে। যা গত বছরের তুলনায় ৫০/৬০ টাকা বেশি। তিনি আরো বলেন যে, গত বছর গুড়ের আমদানি বর্তমানের থেকে বেশি ছিল। এই গুড় গ্রীষ্মকালে পাওয়া যায়না বলে অনেকে গরমের সময় বিশেষ করে রমযান মাসে সেহরীতে খাওয়ার জন্য ক্রয় করে ফ্রিজে রেখে দেন। আরো এক কৃষক ধীরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন; শীত এলে মানে পৌষ পার্বণে জয়পুরহাট জেলার গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারের ঘরে ঘরে চলতো খেজুরের রসে ভিজানো বিভিন্ন রকমের রসের পিঠা, সে পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। কিন্তু আজ খেজুর গাছ ও রসের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে তেমন চোখে পড়েনা। বিভিন্ন জায়গায় কিছু কিছু গাছ দেখা যায় তবে অযত্ন ও অবহেলা আর গাছি’দের অভাবে গাছের যত্ন এবং গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদি এমন অবস্থা চলতে থাকে তাহলে হয়তো একদিন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছ এবং রসের তৈরী করা ঝোলা ও পাঠালি গুড় হারিয়ে যাবে।