ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের ভালুকার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার চালায় বানিজ্যিক ভাবে আম্রপলি ও বারিফুল জাতের বিষমুক্ত আমের আবাদ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন ভালুকার ফল ব্যবসায়ী কামাল হোসেন। ভালুকা বাস্ট্যান্ড ফলের বাজারে কামাল হোসেনের দোকানে ফরমালিন ও বিষমুক্ত আম্রপলি আম থরে থরে সাজানো সকলের নজরে আসে।
৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমী ফল আমের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বর্তমানে ভালুকার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বানিজ্যিক ভাবে আম্রপলি আম সহ বিভিন্ন জাতের আমের আবাদ অনেক বেড়ে গেছে। ভালুকার উৎপাদিত আম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী করে চাষীরা লাভবান হচ্ছেন। আম সংরক্ষনে কোল্ডষ্টোরেজ ব্যবস্থা থাকলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী সম্ভব বলে চাষিদের ধারনা। ভালুকার কৃষিতে আমের আবাদ নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বলে চাষীদের অভিমত। ৯জুলাই মঙ্গলবার সরেজমিন আউলিয়ার চালা গেলে দেখা যায় কামাল হোসেনের বাগানে সারি সারি গাছে বোটায় বোটায় ঝুলছে আম আর আম। কামাল হোসেন জানান তার বাড়ি ভালুকা পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ড ভান্ডাব গ্রামে। প্রায় ৩০ বছর যাবৎ ভালুকা বাসস্ট্যন্ড বাজারে আম, কমলা, আপেল, আঙুর, সৌদি খেজুরসহ নানা মৌসুমী ফলের ব্যবসা করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। প্রতি মৌসুমে রাজশাহী থেকে আম এনে ভালুকায় খুচরা বাজারে বিক্রি করে আসছিলেন। আমদানী করা আমে ফরমালিন থাকায় অনেক সময় ক্রেতাদের অভিযোগের সম্মুখীন হতে হয়েছে। \
ভালুকার মাটি আম কাঁঠাল চাষে বেশ উপযোগী। তাই তিনি নিজে আম চাষ করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু নিজের জমি না থাকায় উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার চালা ও মধুপুর এলাকায় মালিকদের নিকট হতে বাৎসরিক ভাড়ার চুক্তিতে জমি ভাড়া নিয়ে বানিজ্যিক ভাবে আম চাষ শুরু করেন। আউলিয়ারচালায় প্রথম বছর ৩ হাজার ৫০০ আম্রপলি ও বারিফুল জাতের আমের চারা রোপন করেন। দুই বছরের মাথায় ফল আসতে শুরু করে। চারা রোপন, পরিচর্যা, সার কীটনাশক, নিরাপত্তা বেষ্টনী ও যাবতীয় কাজ কর্ম বাবদ প্রায় ৮/৯ লাখ টাকার উপরে খরচ হয়েছে। গাছ ঘন হওয়ায় এক হাজার গাছ সরিয়ে ফেলায় বর্তমানে দুই হাজার পাঁচশ গাছ রয়েছে তার বাগানে। প্রতিটি গাছেই এখন প্রচুর ফল ধরেছে। এছাড়াও পাশর্^বর্তী মধুপুর এলাকায় ৯ টি বাগান রয়েছে। গত বছর তিনি ২৫ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে আম পাঁকা শুরু হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা বাগান হতে আম কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ফরমালিন ও বিষ মুক্ত আম হওয়ায় তার বাগানের আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে আমরোপালী আমে কোন আঁশ না থাকায় এ আম যেমন মিষ্টি তেমনি সুস্বাদু। তিনি নিজেও ভালুকা বাসস্ট্যান্ড বাজারে তার বাগানের আম খুচরা ও পাইকারী বিক্রি করছেন। টাটকা ও ফরমালিন মুক্ত হওয়ায় কামাল হোসেনের রূপালি আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ১২ হাজার টাকা মাসিক বেতনে ৭/৮ জন শ্রমিক সার্বক্ষনিক তার বাগান পরিচর্যায় নিয়োজিত রয়েছে। বাগানের নিরাপত্তায় চারিদিকে জাল দিয়ে বেড়া দেওয়া আছে। পাইকারী বাজারে আম্রপালি জাতের প্রতি কেজি আম ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি জানান এ বছর অতিরিক্ত খরার কারনে আমের আকার ছোট বড় হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় উৎপাদন কিছুটা কম হবে। তদুপরি এ বছর সব গাছে ফল আসায় ৩০ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে তিনি আসাবাদী। শ্রমিকদের বেতন জমি ভাড়া ও আনুষাঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে মৌসুম শেষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা মুনাফা আসবে বলে তিনি আশাবাদী। ব্যাবসার পাশাপাশি আমের আবাদ করে তিনি সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার স্বচ্ছল পরিবার। ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করছেন। তিনি জানান ভালুকার বিভিন্ন এলাকায় এখন ব্যাপক ভাবে আম্রপলি আমের আবাদ হচ্ছে আর আম চাষ করে অনেকের সংসারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন । তবে আম চাষে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে ফলন আরও বেশী পেতেন বলে তিনি মনে করেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নুসরাত জামান জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৫০হেক্টর জমিতে কার্টিমন, আম্রপলি, আশ্বিনা,বারি আম-৪,ব্যানানা ম্যাংগো, ল্যাংড়া,ফজলিসহ বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়েছে। দেশিসহ আম্রপলি বারিফুল জাতের আম বেশি চাষ হয়। উপজেলার উথুরা, মল্লিকবাড়ী, হবিরবাড়ী ভালুকা ইউনিয়নসহ প্রায় ইউনিয়নে আমের চাষাবাদ রয়েছে। চাষি কামাল হোসেনরে বাগানে ডাকাতিয়া ইউনিয়নের উপ সহকারি কৃষি অফিসার সার্বিক খোঁজ খবর ও পরামর্শ দিয়েছেন।